বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস ও দ্বন্দ্ব

0
আমার ছেলেবেলার প্রায় পুরোটা কেটেছে ঢাকার পাশেই গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে। ঢাকার সম্পূর্ণ আমেজ আর সুযোগ সুবিধা পেয়েই বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে ঘুরতাম। কোন পহেলা বৈশাখ আমার ঘোরা বাদ যায় নি, যেবার বোমা হামলা হয়েছিল সেবারও ছিলাম রমনা বটমূলেই। অনেক পরে বুঝতে শিখেছি আরও অনেক বিষয়ের মত নাকি এই বিষয় নিয়েও দ্বন্দ্ব আছে।কিভাবে বুঝতে শিখলাম? বাবা দেখতাম ওপার বাংলার আত্মীয় স্বজনদের এক দিন পরে শুভেচ্ছা জানাতো। জানলাম, দুই দেশে নাকি ভিন্ন দিনে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। যদিও সব কিছু বোঝার পর আমার মনে হয়েছে আসলে দ্বন্দ্ব কোথায় বরং সুবিধাই হয়েছে। একটু বিশ্লেষণে যায়-

শুরুতেই জানা দরকার দিনপঞ্জিকা আসলে কি বা এটি তৈরীর ভিত্তিটা কি?
 দিনপঞ্জিকা আসলে দিন গণনার কিছু নিয়ম।
প্রতিটি দিনপঞ্জিকা তৈরী হয় কিছু বিশেষ কিছু মাইলফলকের উপর ভিত্তি করে।সামগ্রিক ভাবে ভিত্তিগুলোকে এভাবে ভাগ করা যায়-
 ১)চান্দ্র
 ২)চান্দ্র-সৌর
 ৩)সৌর
উদাহরণ স্বরূপঃ হিজরী ক্যালেন্ডার হল এমন একটি ক্যালেন্ডার যেটি বারো চান্দ্র মাসের সমন্বয়ে গঠিত।
চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিন করতে ২৯.৫৩ দিন সময় নেয় তাই এক চান্দ্রমাস=২৯.৫৩ দিন তাই এক হিজরী বছর হচ্ছে বারো চান্দ্রমাস=৩৫৪.৩৬ দিন। অর্থাত্‍ এটি একটি চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকা। এর সাথে সূর্যের গতি বা অবস্থানের কোন সম্পর্ক নেই।
সূর্যের প্রেক্ষিতে পৃথিবীর অবস্থান অনুসারে যে দিনপঞ্জিকা তৈরী করা হয় যেমন গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিকা।
বর্তমান যুগে অফিসিয়াল কাজের জন্য এটি অধিক প্রচলিত।
পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিনের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬৫.২৫ দিনকে ৩৬৫ টি ভাগে ভাগ করে এই ক্যালেন্ডারটিকে তৈরী হয়। বাকী ০.২৫ দিনকে ব্যলেন্স করার জন্য প্রতি ৪ বছর পরপর(০.২৫*৪=১) দিন ফেব্রুয়ারী মাসে অতিরিক্ত যোগ করা হয়।
যদি এমন একটি দিনপঞ্জিকা আপনি বানাতে চান যেটা দিয়ে সঠিকভাবে বছর গননার পাশাপাশি  নির্দিষ্ট বা পবিত্র দিনসমূহ আগে থেকেই সনাক্ত করে রাখা সম্ভব হবে এবং সাথে সাথে ঋতুসমূহ ও নির্দিষ্ট ফসলের জন্য উপযুক্ত সময় এবং আবহাওয়া এর সম্ভাব্য অবস্থাও জেনে রাখা যাবে সেক্ষেত্রে আপনাকে পৃথিবীর সাপেক্ষে চন্দ্র-সূর্য এবং নক্ষত্রসমূহের গতিপথ ও অবস্থান বিবেচনা করে দিনপঞ্জিকা বানাতে হবে।
আমাদের আলোচ্য বাংলা ক্যালেন্ডারটি এ ধরনের।
আমরা সকলের জানি যে চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিন করে আবার পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে এবং সূর্যও তার নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমন করে। চাঁদের পরিভ্রমন পথের মধ্যে মোট ২৮টি নক্ষত্র রয়েছে।প্রতিটি নক্ষত্রের ব্যাসার্ধকে চাঁদ তার গতিপথ বরাবর প্রায় একদিনে(একদিনের কিছু কম সময়ে) পরিভ্রমন করে। তাই ২৮টি নক্ষত্রকে পরিভ্রমন করতে চাঁদের ২৭.৩২ দিন সময় লাগে ।এই সময়টিকে বলে এক চান্দ্রমাস। প্রতিটি নক্ষত্রের ব্যাসার্ধকে আবার সমান চারভাগে ভাগ করা হয় যার প্রত্যেকটিকে একটি করে পদ বলা হয়। এখন আসি সূর্যের কাছে। চাঁদের এই পরিভ্রমন পথে যেমন ২৮টি নক্ষত্র দেখা যায় ঠিক তেমনি এই পথে গুরুত্বপূর্ন ৯টি অবস্থান বা বস্তু অবস্থিত। এখানে উল্লেখ্য যে এই ৯টি বস্তুর মধ্যে রাহু এবং কেতু হল সেই দুটি বিন্দু যেখানে চন্দ্রের এবং সূর্যের কক্ষপথ পরস্পরকে ছেদ করে।ওই দুটি বিন্দুকে আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় যথাক্রমে এসেন্ডিং এবং ডিসেন্ডিং সোলার নোডিউলস বলে। এই বিন্দুদ্বয়ে চন্দ্র ও সূর্য একত্রে অবস্থান করলে চন্দ্রের কারনে আমরা পৃথিবী থেকে সূর্যের আলো অথবা সূর্যের কারনে চাঁদকে দেখতে পাইনা অর্থাৎ চন্দ্রগ্রহন বা সূর্যগ্রহন হয়।

বাংলা ১২ মাসের নামও নেওয়া হয়েছে নক্ষত্রের নাম ও অবস্থান থেকে। এই নাম সমূহের উল্লেখ জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ “সূর্যসিদ্ধান্ত” এ পাওয়া যায়।

বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আষাঢ় – উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
শ্রাবণ – শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ভাদ্র – পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
আশ্বিন – অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
কার্তিক – কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) – মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
পৌষ – পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
মাঘ – মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
ফাল্গুন – উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
চৈত্র – চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

এই নাম যে সব সময় এমন ছিল তাও নয়। সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী অনুযায়ী মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল ফারসী ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।

দিনের শুরু ও শেষ নিয়ে প্রধান তিন ধরনের বর্ষপঞ্জির মধ্যে পার্থক্য আছে। বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজী বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় মধ্যরাত হতে। আর হিজরী সনে তারিখ শুরু হয় সূর্য ডোবার সাথে সাথে।

শংকর দীক্ষিতের মতে, হিন্দু পঞ্জিকা সৃষ্টির তিনটি যুগ রয়েছে ১. বৈদিক যুগ (অবর্ণিত প্রাচীনকাল থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ২. বেদান্ত-জ্যোতিষ যুগ (১৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ) ৩. সিদ্ধান্ত-জ্যোতিষ যুগ (৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত)।

মজার প্রশ্ন হচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জি যদি হিন্দু বর্ষপঞ্জি হয় তবে তাতে সবে মাত্র ১৪৩১ সাল কেন?
গল্প এখনো শেষ হয় নি। আজকের  আমরা যে বাংলা সন গণনা করি তার আনুষ্ঠানিক প্রচলন করেন জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট।মুঘল সাম্রাজ্য ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত ছিল; অঞ্চলটি সে সময় হিন্দুস্থান বা হিন্দ নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া আফগানিস্থান ও বেলুচিস্থানের বেশ কিছু এলাকাও মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৭০৭ সাল পর্যন্ত এর সীমানা বিস্তার করে, এবং ১৮৫৭ সালের এর পতন ঘটে। চেঙ্গিস খান ও তৈমুর লঙের উত্তরসূরী জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে দিল্লীর লোদী বংশীয় সর্বশেষ সুলতান ইবরাহিম লোদীকে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো । পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। 
জানা মতে, সম্রাট আকবরের সময় ভারতবর্ষে ৪০ ধরনের পঞ্জিকার প্রচলন ছিল। সারা দুনিয়ার মতোই এখানেও প্রধান প্রধান জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব পঞ্জিকা ছিল। 
আনুষ্ঠানিকভাবে গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক যদিও প্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জিকাকে লিপিবদ্ধ করান। মোঘল শাসন শুরু হলে মোঘলরা তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোন বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে দেশ চালাতে লাগলেন ।কিন্তু তারা এতে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হলেন। কেননা হিজরী ক্যালেন্ডারের সাথে ঋতু, ফসল ফলনের সময় কিছুই মেলেনা যার কারনে কর সংগ্রহ প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। এমতাবস্থায় মোঘল সম্রাট আকবর পুনরায় বাংলা বর্ষপঞ্জিকা চালু করেন যাকে ফসল উত্‍পাদনের সময় নির্দেশ করতে পারার গুনের কারনে "ফসলি সন" বলা হত পরবর্তীতে যা বঙ্গাব্দ বলে পরিচিত হয় এবং তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের বাংলা সাল গণনা করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব কিছু ছেড়ে আকবর কেন হিন্দু বর্ষপঞ্জিটাকে আদর্শ ধরে ফসলি সন নির্ধারণ করতে গেলেন?
ইতিপূর্বে বলেছি এই হিন্দু বর্ষপঞ্জিকায় একই সাথে চন্দ্র,সূর্য,নবগ্রহ ও নক্ষত্রসমূহের সাথে পৃথিবীর তূলনামুলক অবস্থান আমরা জানতে পারি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হিন্দুদের পঞ্জিকায় আগে থেকেই গানিতিক পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ দিন যেমন বিজয়া দশমী,ঈদ,বুদ্ধপূর্নিমা প্রভৃতির তারিখ অনেক আগে থেকেই বলে দেয়া যায়,চাঁদ ওঠার অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়না। ফলে ফসল এবং ঋতুর একটি ভালো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব ছিল। ধরুন আপনি যদি জানতে চান ২০৩০ সালে বিজয়া দশমী কয় তারিখ পড়বে বা ২০৩৫ সালে ঈদ উল আযহা কয় তারিখ তা জানার জন্য আপনাকে চাঁদ দেখার জন্য বসে থাকতে হবেনা। আপনি সহজেই তা জেনে নিতে পারবেন চান্দ্র-সৌর বর্ষপঞ্জিকা পদ্ধতির মাধ্যমে। মোঘল দরবারের রাজকীয় জ্যোর্তিবিদ আমির ফতেউল্লাহ্ সিরাজী চান্দ্রমাস নির্ভর হিজরী বর্ষপঞ্জি এবং সৌর-চান্দ্র মাস নির্ভর হিন্দু বর্ষপঞ্জি গবেষণা করে আমাদের নতুন ফসলি বর্ষপঞ্জি প্রস্তাব করেন। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আকবর যখন সিংহাসনে বসবেন তার আগেই জ্যোতির্বিদ সিরাজী বলেন ঐ বছর ১৪ এপ্রিল তারিখে ফসিল সনের নতুন বছর শুরু হবে। একথা শুনে আকবর ঐ দিনেই অভিষেক নেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় সাল গণনা নিয়ে। তখন হিজরি ৯৬৩ সাল চলছিল। প্রজারা ইতিমধ্যে ঐ সালের কর দিয়েছেন, দিচ্ছেন বা দিবেন। আর তখন ছিল হিজরি বছরের মাঝামাঝি অবস্থা। এক বছরের মাঝে হঠাৎ করে আরেকটি বছর কী করে শুরু করে দেওয়া যাবে?তাই সব সমস্যা এড়াতে  ধরে নেওয়া শুরুর দিন কিন্তু ১ সাল নয় হবে ৯৬৩ সাল। 
এবার প্রশ্ন হচ্ছে তবে তো হিজরি সাল ও বাংলা সাল একই হবার কথা, কিন্তু তা তো নয়। আসলে
এক সৌর বছর=৩৬৫ দিন যেহেতু হিজরি বর্ষপঞ্জিতে  প্রায় ১১ দিন কম থাকে তাই ধীরে ধীরে হিজরি সাল পিছিয়ে যায়। হিজরী ৯৬৩ থেকে বঙ্গাব্দ শুরু বছর থেকে এ পর্যন্ত পেরিয়েছে (১৪২১-৯৬৩)=৪৫৮ বছর। প্রতিবছর ১১ দিন হিসাবে ৪৫৮ বছরে দিনের পার্থক্য (৪৬৮ গুন ১১)=৫০৩৮ দিন। মানে (৫০৩৮/৩৬৫)=১৩.৮০২৭ বছরের পার্থক্য হয়েছে।

এতো গেল ইতিহাস কিন্তু পহেলা বৈশাখ দুই ভিন্ন দিনে গেল কি করে?
আসলে আগে একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয় নি বলে প্রশ্নটি এখনো রয়ে গেছে। সেই যে জ্যোতির্বিদ সিরাজি তিনি কি করে বলেছিলেন যে কবে হিন্দু বর্ষপঞ্জি অনুসারে নতুন সাল বা পহেলা বৈশাখ হবে। আসলে পহেলা বৈশাখের একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া ছিল সেখানে। সূর্য যেদিন Eliptic এ ৩ ডিগ্রী ২০মিনিট অক্ষাংশে বিশাখা বা Librae নামক নক্ষত্রের সাথে এক সরলরেখায় অবস্থান নেবে তখন থেকে পরবর্তী সূর্যোদয়ের পর থেকে পহেলা বৈশাখ শুরু হবে। সাধারণত এই দিন ১৫ই এপ্রিলই হয়। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। ১৯৫২ সালে বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহা ভারতে প্রচলিত প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যাভিত্তিক বর্ষপঞ্জির আমূল সংস্কার প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাব অনুসারে বৈশাখ-ভাদ্র এ পাঁচ মাস হবে ৩১ দিন এবং পরবর্তী আশ্বিন-ফাল্গুন ছয় মাস হবে ৩০ দিন করে। সে হিসাবে চৈত্র মাস হবে ৩০ দিন এবং অধিবর্ষে বা লিপইয়ারে হবে ৩১ দিনে। তার এ প্রস্তাব অনুসারে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ হওয়ার কথা। ভারত সরকার পুজা অর্চনা সহ নানা সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই সংস্কার না মানলেও বাংলাদেশ তা মেনে নেয়। ১৯৬৬ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারী ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ড. মেঘনাদ সাহার প্রস্তাবনা মাথায় রেখে প্রাচীন জটিল গানিতিক নক্ষত্রের হিসাব বাদ দিয়ে সম্পূর্ন ইংরেজী ক্যালেন্ডারের অনুকরনে বাংলা ক্যালেন্ডার সাজানোর প্রস্তাব দেন এবং ফলস্বরুপ এর স্বকীয়তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের প্রস্তাবনাগুলো ছিল এরুপ-

১.বৈশাখ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিনে হবে।
২.চৈত্র থেকে আশ্বিন পরবর্তী সাতমাস ৩০ দিনে হবে।
৩.প্রতি লিপ ইয়ারে ফাল্গুন মাসের সাথে এক দিন যুক্ত হবে।

এখানে একটি অন্যতম যুক্তি ছিল বাংলা নববর্ষে লিপ ইয়ার নামে কিছু ছিল না। ভারত সরকার ঠিক যুক্তিতে মহাদেব সাহার সিদ্ধান্ত বাতিল করে যে এই বর্ষপঞ্জির মাসগুলো নির্ধারিত হয় সূর্যের প্রকৃত আবর্তনকে ভিত্তি করে । এই বর্ষপঞ্জিতে বর্ষ সংখ্যা হতে সাত বিয়োজন করে তা ৩৯ দিয়ে ভাগ করতে হয় । যদি ভাগশেষ শূন্য হয় বা ৪ দিয়ে বিভাজ্য হয় তাহলে সে বর্ষটিকে অধিবর্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ৩৬৬ দিনের এই বর্ষের চৈত্র মাস ৩১ দিনের হয় । প্রতি ৩৭ বছরে ১০ টি অধিবর্ষ হয় ।

পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদ পহেলা বৈশাখ যাতে ভারতের সাথে না মেলে সেজন্য পহেলা বৈশাখকে রাষ্ট্রীয়ভাবেই একদিন আগে ১৪ই এপ্রিল নির্দিষ্ট করে দেন।

এর পর তো এখন নতুন দ্বন্দ্ব উঠেছে। অনেকেই এখন বলছেন বাংলা নববর্ষ আসলে হিন্দুদের অনুষ্ঠান। ভবিষ্যতে কি হয় সেটিই হল দেখার বিষয়।

0 comments: