জন্মগত অঙ্গবিকৃতিঃ ঠোঁট -তালুকাটা রোগ ও ক্রেনিওসেন্টেসিস
0
কেন হয় জন্মগত অঙ্গবিকৃতিঃ
যেহেতু মানবদেহের সকল কার্যক্রম এক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে ডিএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সুতরাং ধারণা করাই যায় যে অঙ্গবিকৃতির মূলে রয়েছে নানা ধরনের ক্রোমোসোমগত ত্রুটি বা মিউটেশন( ডিএনএ সিকুয়েন্সের অনাকাঙ্ক্ষিত গাঠনিক পরিবর্তন)। ভ্রূণ দেহের কোষে মারাত্মক ক্ষতিকর মিউটেশন থাকলে ভ্রূণ জৈবিক প্রক্রিয়াতেই মারা যায়। তবে যদি ভ্রূণ কোষের মিউটেশন কোষের এই প্রক্রিয়া থেকে বেঁচে যায় সেক্ষেত্রে ভ্রূণটি ক্রোমোসোমের সেই মিউটেশন নিয়েই দৈহিক পূর্ণতা প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। ফলাফল হিসাবে সৃষ্টি হয় বংশগত রোগ বা জন্মগত অঙ্গবিকৃতি। এছাড়াও এধরনের ত্রুটির আরও একটি কারণ হল ভ্রুনীয় পরিবেশের নানা উপাদান।
মুখগহ্বরের তালু বা আমাদের মস্তিষ্কের খুলির বিকাশগত ত্রুটির কারনেই মূলত আমাদের মুখমণ্ডল ও মস্তিষ্কের খুলির জন্মগত অঙ্গবিকৃতি হয়ে থাকে। এগুলো অধিকাংশই জন্মগত এবং তাদের অনেক অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো খুব ছোট ধরনের হলেও কিছু ত্রুটির ( যেমনঃ তালু কাটা রোগ) জন্য রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারির দরকার হয়। মাথা ও মুখমণ্ডলের মারাত্মক ত্রুটি একদিকে যেমন মানুষের সামাজিক ও মানসিক জীবনে প্রভাব রাখে তেমনি এগুলোর ফলে মানুষের খাবার গ্রহনের ক্ষমতা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাবার মত মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা একেবারে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।
এ ধরনের অঙ্গবিকৃতির প্রাদুর্ভাব কেমন?
করোটি- মুখমণ্ডলীয় অঞ্চলের জন্মগত ত্রুটির মধ্যে ঠোঁট- তালু কাটা রোগ ও ক্রেনিওসেন্টেসিসই প্রধান। এছাড়াও আরও কিছু উল্লেখযোগ্য রোগ হল মাইক্রোসিয়া ( ছোট আকৃতির কান), অ্যাট্রেসিয়া ( কানের অনুপস্থিতি)। এছাড়াও মাথার খুলি ও মুখমণ্ডলেরর অস্বাভাবিক আকৃতিজনিত আরও কিছু সিনড্রোম রয়েছে যার মধ্যে Treacher Collins syndrome , Miller or Wildervanck-Smith syndrome, Nager syndrome, Mobius' syndrome, এবং Pierre Robin syndrome উল্লেখযোগ্য। জন্মনেওয়া প্রতি ৩০০ থেকে ২০০০ শিশুর মধ্যে একজনের এই ধরনের অঙ্গবিকৃতির মধ্যে একবা একাধিকটি দেখা যায়।
ঠোঁট ও তালু কাটা রোগঃ
ঠোঁট কাটা রোগ মূলত উপরের ঠোঁট এবং নাক ও ঠোঁটের সংযোগস্থলের মাংসপেশির অস্বাভাবিক অবস্থার জন্য হয়ে থাকে। মুখমণ্ডলীয় মাংশপেশিগুলোকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যাতে পারে যথা ন্যাজোল্যাবিয়াল বা নাকের ছিদ্রের চারপাশের অংশের মাংসপেশি, বাইল্যাবিয়াল বা মুখছিদ্রের চারপাশের অংশের মাংসপেশি, ল্যাবিওমেন্টাল বা নিচের ঠোঁট ও চিবুকের অঞ্চলের মাংসপেশি।
ন্যাজোল্যাবিয়াল ও বাইল্যাবিয়াল মাংসপেশির গঠন একদিকে ব্যাহত হলে তাকে একপার্শ্বীয় ঠোঁট কাটা রোগ বলে এবং দ্বিপার্শীয় ঠোঁট কাটা রোগের ক্ষেত্রে রোগের প্রভাব আরও বেশি হয়।
তালুকাটা রোগঃ

তালুকাটা রোগের চিকিৎসাঃ
এই রোগের চিকিৎসা মূলত রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারি। বাংলাদেশে অনেক হাসপাতালে বিনামূল্যে বা অনেক কম খরচে এই ধরনের রিকন্সট্রাঙ্কটিভ সার্জারি করা হয়। এ ধরনের সার্জারির ফলাফল অত্যন্ত আশাপ্রদ। সার্জারি সফল হলে বাচ্চা দেখতে একেবারেই স্বাভাবিক বলে মনে হয়। নিচের চিত্রে অপারেশনের আগের ও পরে একই বাচ্চার ছবি দেওয়া হল।

ক্রেনিওসেন্টেসিসঃ



এই সুচার নামক সন্ধি সময়ের আগে জোড়া লেগে গেলে একদিকে যেমন মস্তিকের বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্থ হয় তেমনি মস্তিস্ক যে দিকে সন্ধি জোড়া লেগেছে তার বিপরীত দিকে সরে যেতে বাধ্য হয় ফলে মাথার আকৃতির পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়াও এ সংক্রান্ত জটিলতার মধ্যে আছে মাথার খুলির অভ্যন্তরে চাপের মান বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের সেরিব্রামের রক্তপ্রবাহ হ্রাস, দর্শন বা শ্রবণ সংক্রান্ত জটিলতা ও মানসিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা। নিচের চিত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্রেনিও সেন্টেসিসের উদাহরণ দেওয়া হল।
প্লাজিওসেফালিঃ এক পাশের করোনাল সুচার জোড়া লেগে গেলে হয়ে থাকে।
ট্রাইগনোসেফালিঃ মেটোপিক সুচার জোড়া লেগে গেলে হয়ে থাকে।



-শুভাশীষ সাহা শুভ