বিশ্বের প্রথম স্পন্দনহীন কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডঃ
0
আমরা প্রায়ই নানা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে নানা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কথা
শুনেছি। তোমরা হয়ত জানো এখন আমাদের দেশেই কর্নিয়া, যকৃৎ ও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন
করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশে এখনও হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করার কাজ শুরু হয়নি। প্রতিবছর
অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ হার্ট ফেইলরে আক্রান্ত হন এবং ইউরোপ ও আমেরিকাতে
এ সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। এ রোগে আক্রান্ত মানুষেরা প্রচলিত চিকিৎসায় কিছুদিন বেঁচে
থাকেন তবে তাদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা হল হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন। তবে উন্নত
প্রযুক্তি ও দানকৃত হৃৎপিণ্ডের সঙ্কট এ ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা। দানকৃত অঙ্গের
সংকটের জন্য বিজ্ঞানীরা কৃত্তিম অঙ্গ আবিষ্কারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইতিপূর্বে
ইউনিভারসিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,সান ফ্রান্সিস্কোর বাংলাদেশী বিজ্ঞানী শুভ রায়
কৃত্তিম বৃক্ক আবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
তেমনিভাবে অনেক বিজ্ঞানী নিরলশভাবে কৃত্তিম হৃৎপিণ্ড আবিষ্কারের চেষ্টা
করছেন এবং কিছু তৈরিও করেছেন। পূর্বে আবিষ্কৃত এসকল হৃৎপিণ্ডের প্রধান সমস্যা হল
রক্তকে চাপ দিয়ে বের করে দেবার জন্য যে থলির ন্যায় অংশ থাকে তা ছিঁড়ে বা নষ্ট হয়ে
যায়।
অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক অবশেষে BIVACOR নামে এক নতুন
ধরনের কৃত্তিম হৃৎপিণ্ড আবিষ্কার করেছেন যা সারা দেহে কোন নাড়ি স্পন্দন উৎপাদন না
করেই সারা দেহে রক্ত পৌঁছে দিতে পারবে। ইতিমধ্যে যন্ত্রটি গত জানুয়ারি মাসে একটি
ভেড়ার দেহে সার্থকভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং ভেড়াটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা
আগামী তিন বছরের মধ্যেই তা মানুষের দেহে স্থাপন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন। ইতিপূর্বে
আবিষ্কৃত অন্যান্য কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডের তুলনায় এটি অনেক ছোট এবং দীর্ঘদিন কাজ করতে
পারবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা।
BIVACOR নামে যন্ত্রটির গঠন অনেকটাই সরল; এতে একটি মাত্র মোটরের
সাথে যুক্ত দুইটি টাইটেনিয়াম নির্মিত চাকতি রয়েছে যা প্রতিমিনিটে প্রায় ২০০০ বার
ঘোরে এবং রক্তকে সহজেই যন্ত্রের অপরপাশ দিয়ে বের করে দেয়। গবেষকদলের অন্যতম গবেষক
ব্রানকো বলেন “প্রচলিত স্পন্দন ভিত্তিক কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডের সাথে এই যন্ত্রের অন্যতম
পার্থক্য হল এতে কোন বেলুনের ন্যায় থলি নেই যা রক্তকে দেহের বিভিন্ন অংশে নিয়ে
যাবার কাজ করবে। ফলে এই কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডটি দীর্ঘদিন ব্যবহারেও সহজে নষ্ট হবে না।”