ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ

0
প্রথমেই বলে রাখি নিজ দেশের রাষ্ট্রনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ নয় আমি, না আমি কোন ইতিহাসবেত্তা। নিজের ছোট ছোট পর্যবেক্ষণ থেকে এই লেখা লিখছি। লেখাটিতে অসঙ্গতি থাকতেই পারে, তাতে বরং সুবিধা আলোচনা করা যাবে।

সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে “ভারতের দালাল।” এরা থাকে বাংলাদেশে কিন্তু কোন কিছু হলেই ভারতের উদাহরন দেয়, ভারতকে সেরা বলে দাবি করে, একটু কিছু হলেই ভারতের গুণগান করে, সারাদিন ভারতীয় হিন্দি, বাংলা, তামিল চলচিত্র দেখে, মেয়ে দেখে শিস দিয়ে “কে তুমি নন্দিনী”র বদলে গায় “তেরা মাস্ত মাস্ত দো নায়ন”। 
ভারতের শোষণ ও বৈষম্যমূলক আচরণ আজকাল আমাদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছে যে ভারত এ দেশে যায় করবে তাই ক্ষতিকর, ভারতের সাথে কোন কিছু করা মানে দেশ বিকিয়ে দেওয়া। স্বাভাবিক বিষয় এটি, তবে ধারণা টি কত টুকু যুক্তিযুক্ত ?কতটুকু সত্য? আর এর জন্য দায়ী বা কে? ভারত না কি অন্য কেউ?

বর্তমান বিশ্ব সম্পূর্ণ রুপে সংযুক্ত, এই সংযুক্তির যুক্তিতে বলা হয়েছিল এটি বিশ্বের সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা এনে দেবে, তথ্য প্রযুক্তির প্রসার হবে। কিন্তু যেটি বলা হয় নি তা হল সব খানে প্রতিযোগিতা বাড়বে, আর এ প্রতিযোগিতা হবে অসম প্রতিযোগিতা। কেন অসম? কারণ যে মুহূর্তে প্রতিযোগিতা শুরু হল সে মুহূর্তে কেউ এগিয়ে ছিল, কেউ পিছিয়ে ছিল। যে এগিয়ে ছিল সে তার পিছনের কাউকে আর আগাতে দেবে না। 
কেন আগাতে দেবে না?চাইলেই তো আগানো যায়।
জী না যায় না, কারণ এগিয়ে চলার জন্য দরকার উন্নত জ্ঞান,উন্নত চিন্তা। জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন তাদের হাতে, আর কোনটি উন্নত চিন্তা তা নির্ধারণ করার অধিকার ও তাদের। অর্থাৎ তারা প্রথমে নির্ধারণ করবে কোনটি ভালো তারপর আপনাকে সেই মাপে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে তার পর উন্নত হতে হবে আর তত দিনে আবার নতুন উন্নতি তারা সাধন করে ফেলবে।
তবে এগিয়ে যাবার উপায়?
যে দুইটি জিনিসের কথা উপরে বলা হল তা নিজের অধিকারে আনতে হবে, তবেই যদি কিছু সম্ভব।

আমরা এখন capitalism, global village, globalization ইত্যাদি তত্ত্বের উপর নির্ভর করে ভারত বাংলাদেশ স্নায়ু যুদ্ধকে বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো।

পর্যটন শিল্পে ভারত-বাংলাদেশঃ
ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের আবহাওয়া প্রায় একই রকম। তবে ভারত বিশাল দেশ হবার সুবাধে এখানে প্রাকৃতিক ও প্রত্ততাত্তিক নিদর্শনের সংখ্যা বেশি।
পর্যটন শিল্পে ভারত যতটা এগিয়েছে তার সিকিভাগ আমরা আগাতে পারি নি।ভারত বর্তমানে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে ৪ নাম্বার।যদিও তাদের ট্রেনের টিকিট কাটা বিদেশিদের জন্য নিতান্তই অসুবিধা জনক ও দালাল নির্ভর।ট্রেনভেদে মাত্র ৪ থেকে ৬ টি সিট বিদেশীদের জন্য বরাদ্ধ থাকে। এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রের কোথাও যেতে যাবার আগে টিকিট পাবা ভাগ্যের ব্যাপার।কিন্তু তাদের ট্রেনের মধ্যে খাবার ব্যবস্থা আমাদের দেশের তুলনায় বেশ ভালো।
তাদের দেশের যে খানেই যান টুরিসম প্যাকেজ আছে। আমি চেন্নাই গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে, ফেরার টিকিট না পাওয়াতে এক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল, আমি দেখলাম মাত্র তিনশত রুপিতে প্রায় ২২ টা জায়গা ঘোরাবে সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।মেরিনা বিচে গেলাম, কক্সসবাজারের তুলনায় কিছুই না, কিন্তু নিরাপত্তা কক্সবাজার থেকে হাজার ভালো।তারা ডলফিন বে বানিয়েছে, অথচ আমাদের দেশে নেই, কিন্তু আমাদের দেশে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইরাবতী ডলফিনের বাস সুন্দরবনে, নেই ও খানে এই ডলফিনদের ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা, দর্শক আকৃষ্ট করা, নেই নিরাপত্তা।নিজ উদ্যোগে নৌকা ভারা করে লোকাল মাঝির সহায়তায় আপনাকে দেখতে হবে। ধরুন আপনি একজন বিদেশি যাবেন ডলফিন দেখতে। যাবেন কোথায় ভারত বা বাংলাদেশ?
হেরে গেছি এবং যাচ্ছি আমরা আমাদের উদ্যোগের অভাবে, ভারতের ষড়যন্ত্রে নয়।
আপাতত সুন্দরবন গিয়ে ডলফিন না দেখতে পারলেও বাংলাদেশের ডলফিনের উপর ছোট্ট একটি ভিডিও দিলাম প্রায় ৭ এমবির।


চিকিৎসায় ভারত-বাংলাদেশঃ
কারো যদি Indian Visa Application Center এ যাবার অভিজ্ঞতা থাকে তবে দেখবেন যত লোক ভারতে ভিসা নিতে এসেছেন তাদের অধিকাংশ নিচ্ছেন tourist visa কিন্তু যাবেন চিকিৎসা করাতে। কেন যাচ্ছেন ভারত?
১ ভিসা পাওয়া সোজা। ফর্ম ঠিক মত পূরণ করতে পারলেই হল।
২ চিকিৎসা করাতে যারা যান তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য থাকে মুম্বাই, চেন্নাই বা ভেলর। চেন্নাইের Apollo hospital এর অসাধারন সেবার তুলনায় আমাদের এখানের Apollo hospital কে শুধু একটা শব্দে ব্যাখ্যা করা যাই তা হল “গলা কাটা” উত্তরা আধুনিকে বাবার কিডনি বায়োপসি করতে লাগবে বলেছিল ২২ হাজার টাকা। Apollo hospital, channai তে লেগেছে ১৮০০০ টাকা, করেছেন Dr. M K Mani । তিনি ওষুধ দিয়েছিলেন একটি।একবছর পর যেতে বলেছিলেন।তার পর গেলে বললেন এর পর আপনার ইচ্ছা, এক বছর পর আবার গিয়েছিলাম।এখন বাবা ভালোই আছে।
ভারত যাবার উদ্দেশ্য কি? নির্ভরতা।
এই নির্ভরতার জন্য কে দায়ী ভারত? জী না আমাদের ডাক্তাররা।আরও সঠিক ভাবে বললে বিসেসজ্ঞ ডাক্তাররা, আমি নিজে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে বলছি, বাবার খুব সাধারন রোগ নিয়ে আমি যে পরিমান খারাপ অবস্থায় পড়েছি এবং পড়ছি তাতে আমি নিজে খুব সন্দিহান।
ভারতকে দোষ না দিয়ে আসুন আমরা আমদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করি।

সিনেমা শিল্পে ভারত বাংলাদেশঃ
আমাকে ঠিক সিনেমা খোর না বললেও বলতে পারেন। সময়ের অভাবে দেখতে পারি না মাঝে মাঝে। বোঝে না সে বোঝে না, হেমলক সোসাইটি, আশিকি ২, বাইশে শ্রাবণ দেখেন নি এমন মানুষ কম। এ সকল চলচিত্রকে দু ভাগে ভাগ করা যাই বাংলা ও হিন্দি।
বাংলার ব্যাপারে আমার সব সময়ই টান একটু বেশি হইত সব কিছু বুঝি তাই।হাতে একটি একটু খুব ভালো ইংলিশ মুভি আর একটি মোটামুটি বাংলা থাকলেও বাংলা আগে দেখব। ভাষার কোন দেশ কাল হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। তবে যখন প্রশ্ন আসে দেশের সংস্কৃতির মূল্যায়নের তখন স্থান বিষয়টাকে মাথায় রাখতে হয়। একটু খেয়াল করে দেখুন সাম্প্রতিক কালে আপনি যত ভালো বাংলা সিনেমা দেখেছেন ওপার বাংলার সবএ একটি জিনিস কমন, ভেঙ্কটেস ফিল্মস, কিছুই না একটি প্রোডাকশন হাউস। এরা একাই এদের চলচিত্রের রুপ বদলে দিল। অথচ আমাদের দেশের এত বড় বড় ব্যবসা প্রতিস্থান কেউ এগিয়ে আসছে না। এসব ভারতীয় ছবি দেখার জন্য নির্মাতা কতৃপক্ষ কিন্তু কোন টাকা পায় না, বিজ্ঞাপন দেয় না বাংলদেশের টিভিতে, আপনি নিজ আগ্রহে নেটের টাকা খরচ করে করে দেখছেন, কেন দেখছেন ভালো বলেই দেখছেন। প্রতি ঈদে airtel একটি সারা জাগানো টেলিফিল্ম দিচ্ছে। ভেবে দেখুন এর মূলেও কিন্তু ভারতীয় গন্ধ পাবেন।
আমরা আমাদের সুযোগ ওদের ছেড়ে দিচ্ছি।
অনেকেই অভিযোগ আনেন ভারতীয় চ্যানেল আমরা দেখছি তারা দেখছে না আমাদের চ্যানেল। আপনার যদি ভারতের broadcast act জানা থাকে তবে জানবেন এদেশের চ্যানেল ও দেশে দেখাতে আইনগত কোন বাধা নেই, দরকার ও দেশের কোন প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ যা ওদের নেই।আপনি চাইলেও ভারতীয় চ্যানেল দেখা এদেশে বন্ধ করতে পারবেন না যত দিন নিজ দেশের অনুষ্ঠানের মান দিয়ে ওদের হারাতে না পারবেন। আপনার আমার প্রতিবাদ ঐ ব্যাঙ্গাত্তক লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মিরাক্কেল নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। গতবার কি তার আগের বার বাংলাদেশের ছেলেকে জিততে না দেওয়াতে বাংলাদেশের সবাই মিরাক্কেলের এফবি পেজে গালিগালাজ করেছিল, তখন মীর দাঁড়িয়ে বলছিল “ যদিও ব্যাক স্টেজের কথা এখানে বলা ঠিক না তাও বলি, এইও মিরাক্কেল চলে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য, কিন্তু আপনার দেশের ছেলের জন্য যদি আপনাদের যদি এত দরদ তবে এরা যখন দেশের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল তখন কোথায় ছিলেন? আমরা এদের এনে স্টেজে দাড় করিয়েছি, রেখে দেয় নি ফেরত পাঠিয়ে দেব, তখন দেখব এই সোনার ছেলেদের কত যত্ন আপনারা কত করতে পারেন”

অনেক বড় লেখা হয়ে যাচ্ছে, এমন অসংখ্য স্থানে আমাদের দুর্বল অবস্থান চিহ্নিত করা যাবে, যার জন্য মূলত আমরাই দায়ী। শিক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তি সব স্থানে।ব্যক্তিগত জীবনে চিন্তা করুন আপনার লাভ মানে আরেক জনের ক্ষতি, আরেক জনের লাভ মানে আপনার ক্ষতি। আপনি কি করেন যে ক্ষতি করেছে তাকে গালি গালাজ করেন নাকি ভবিষ্যতে যেন সে আর না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করেন।

আসুন অন্য দেশ তা সে ভারত হোক আর আমেরিকা হোক তাদের গালি না দিয়ে নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করি। নিজে বড় হয়, পাশে দাঁড়ানো লোক এমনিতেই ছোট হয়ে যাবে।

জয় বাংলা

আমি তোমায় ভালোবাসি।

0 comments: