মেডিকেলের পড়ালেখা বাংলায় আলোচনাঃ রক্ত, প্রথম পর্ব

0

এটি একটি পরীক্ষামূলক পোস্ট। আমি কোন বড় মাপের physiology বিশেষজ্ঞ নই, আমি নিতান্তই একজন মেডিকেলে পড়ুয়া ছাত্র।আমার জুনিয়র দের মধ্যে অনেকেই বলে ভাই এই জিনিসটা একটু বুঝিয়ে দেন না। আমি বলি ভাই এইতা তো সহজ, যখন সোজা কথায় বাংলা ভাষায় বলি তখন অনেকেই বোঝে কিন্তু বইয়ের জটিল ইংরেজিতে লেখা অনেকেরই বুঝতে কষ্ট হয়।তাই ভাবলাম ধাপে ধাপে যদি একটু করে লিখে physiology এর মুল বোঝার মত অংশ টুকু তুলে ধরতে পারি তবে খারাপ কি?

আমি এর আগেই বলেছি আমি বিশেষজ্ঞ নয়, মেডিকেলের বিষয়গুলো সোজা ভাষায় বলতে গেলে অনেক সময় কিছু ভুল হতে পারে,যেমন গাইডগুলোতে হয়, সেই রকম ভুল যদি কার চোখে পরে তবে অনুগ্রহ করে বলবেন, আপডেট করে দেওয়া হবে।শুধু তাই নয় যদি কোন বিষয় আলোচনা করার সময় ঐ বিষয় সব সময় করার হয় এমন কোন বিষয় বলতে ভুলে যাই তবে মনে করিয়ে দিলে খুশি হবে। প্রথমেই যদিও
 General Physiology আলোচনা করা উচিত তবে আমার সুবিধার জন্য আমি রক্ত দিয়ে শুরু করছি। আমরা এই আলোচনাকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করবো। এটি প্রথম পর্ব।পরবর্তী পর্বগুলোর আগমন নির্ভর করছে এই পর্বের সাফল্যের উপরে, আমরা মুল আলোচনায় ঢুকে পড়ি
রক্তঃ প্রথম পর্ব


===>রক্তের গঠন ও কাজ

রক্ত নিয়ে আলোচনার শুরুতেই যা আমাদের জানতে হবে তা হল রক্ত কি?
Blood is a specialized fluid form of connective tissue which is composed of intercellular substance and cellular elements which circulates within a close circuit of cardio-vascular system”
তাহলে বোঝায় যাচ্ছে ব্লাডের মূলত দুইটি অংশ।একটি সেলুলার অংশ যাতে বিভিন্ন সেল থাকে আর বাকিটা তরল অংশ বা প্লাজমা।আমরা এই শ্রেণী বিভাগ এইচএসসিতেই পড়ে এসেছি।তার পরও একবার অল্প করে বলে দেয় সেলুলার অংশের তিনতি ভাগঃ WBC, RBC, platelet। আর ফ্লুয়িডব অংশের আরও দুটো ভাগ একটি সলিড আর একটি পানি। পানি প্রায় ৯২ ভাগ। সলিডকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যাই organic, inorganic and gases.(জেনে রাখঃ WBC=White Blood Cell= Leukocyte
                      RBC= Red Blood Cell=erythrocyte
                       platelet=thrombocyte)

RBC and Platelet এর কোন প্রকার ভেদ না থাকলেও WBCদুই প্রকার।Granulocyte(দানাদার) and agranulocyte(অদানাদার) Granulocyteগুলোকে PMNs ও বলে (Polymorphonuclear Leucocytes)কাজ তোমরা বই থেকে পরে নিবে।

মানুষের রক্তে সেলুলার অংশের স্বাভাবিক পরিমান দেখিয়ে একটি ছবি।



আরও কত গুলো বিষয় জানা দরকার বলে মনে করছি। উপরের ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ছেলেদের লোহিত রক্ত কনিকার পরিমান মেয়েদের তুলনায় বেশী। কেন? উত্তর হল হরমোনের কারনে, কি হরমোন? Testosterone.
এছাড়া আমরা আরও জানি মানুষের রক্ত কনিকা biconcave অর্থাৎ উভঅবতল। এর সুবিধা কি? এই প্রশ্নের উত্তর না পারলে পাস করা কস্ট। biconcave হবার ফলে -
=è এটি খুব সহজে endothelial pore দিয়ে বের হতে পারে, endothelial pore হল blood vessel এর endothelium স্তরের ছিদ্র।
=>এর
surface Area বৃদ্ধি পায়=> এতে mitochondria না থাকায় এর মধ্যে থাকা অক্সিজেন ব্যায় হয় না


একটি বিশেষ চিত্র Ganong থেকে রক্তের প্রবাহ বোঝার জন্য।এই চিত্র এখন অপ্রয়োজনীয় মনে পারে কিন্তু চিত্র টা ভালো দেখে রাখোবিশেষ করে করোনারি অংশ টুকু এক সময় কাজে লাগবে


আর একটা কথা বলে নেয়, মেডিকেলের কোন কিছু সহজে ব্যাখ্যা করা খুব কষ্টের কিছু না কিছু বাদ পড়বেই, আমরা যে সকল জিনিস সুধুই মুখস্থ করতে হয় তা শুধুমাত্র বলে দিব কোথা থেকে পড়তে হবে।
যেমন রক্তের
Specific Gravity, pH, Osmolarity, Temperature, Viscosity(সান্দ্রতা ),volume এগুলো যে কোন বইতে পাবে তবে খুজে খুঁজে পরতে সমস্যা হলে গাইড ব্যবহার করবে বা তোমার প্রফেসর যে সংখ্যা বলবে সেইটায় ব্যবহার করবে।সাথে তিন ধরনের রক্ত কনিকার Normal Value এবং Lifespan মুখস্থ করবে, প্রচুর বার ধরবে এবং এইটা ছাড়া পাস হবে না।

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি
serum টেস্টের কথা। সেক্ষেত্রে দেখা যায় রক্ত নেয়, কিন্তু রক্তের উপাদানের কোথাও তো সিরাম নামে কিছু পড়লাম না, তবে সিরাম কি জিনিস?
=
èআসলে প্লাজমা অংশটাই সিরাম হয়। রক্তকে যদি জমাট বাধতে দেওয়া হয় তবে রক্ত কনিকা গুলো জমাট বেঁধে যায় তবে যে পানির মত অংশ থাকে সেইটায় সিরাম। বলতে পারো যে ভাইয়া দুইটা জিনিস আর প্লাজমা তো একই হল। না হল না কারন প্লাজমা তে কিছু জিনিস থাকে যা সিরামে থাকে না, কি কি? নিজেরা চিন্তা করে বের কর না পারলে বইতে খুঁজে দেখ। তাও না পেলে যোগাযোগ করো পরে বলব। কারন এখন বললে তোমরা মেইন বই পড়বে না।
যাইহোক ল্যাবে সিরাম কি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে তার পর তৈরি করা হয়? হ্যাঁ, করা যেতে পারে তবে এত ঝামেলা না করে রক্ত কে
centrifuge মেশিনে ঘোরানো হয়  


রক্ত কনিকা তৈরি

আমরা আগে থেকেই জানি রক্ত কনিকা কোথায় তৈরি হয়? অস্থিমজ্জায়। তবে আরও একটু বিস্তারিত জানব।তার আগে জেনে নেয় অস্থিমজ্জা কত ধরনের? অস্থিমজ্জা মূলত দুই ধরনের। Red Bone Marrow and Yellow Bone Marrow যখন বয়স কম থাকে তখন শরীরের সকল বোন ম্যারো লাল থাকে এবং রক্তকনিকা তৈরি করে (খেয়াল কর রক্তকনিকা বলেছি, তার মানে সকল রক্ত কনিকা তৈরি হয়)পরবর্তীতে এই বোন ম্যারো ফ্যাট সেল দারা প্রতিস্থাপিত হলে তখন এগুলো আর রক্ত কনিকা তৈরি করতে পারে না, তখন একে Yellow Bone Marrow বলে ।তাহলে পূর্ণবয়স্কদের কোথায় Red Bone Marrow থাকে? সকল ফ্ল্যাট বোনে থাকে, vertebra, স্টার্নাম ও রিবসে থাকে।

ভ্রুনাবস্থায় রক্ত শুধু বোন ম্যারো থেকে নয় লিভার ও স্প্লিন থেকেও তৈরি হয়। বড় দের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে? হ্যাঁ হতে পারে, তবে শুধু মাত্র
pathological condition এ।যদি কোন রোগে বোন ম্যারো destroyed বা fibrosis হয় তবে হতে পারে। এ ধরনের রক্ত কনিকা তৈরিকে বলা হয় Extramedullary Hematopoiesis hematopoiesis মানেই রক্তকনিকা উৎপাদন।

অস্থিমজ্জায় ৭৫% থাকে শ্বেতরক্তকনিকা উৎপাদনকারী কোষ আর ২৫ % থাকে লোহিত রক্ত কনিকা উৎপাদনকারী কোষ
অথচ প্রবাহমান রক্তে লোহিত রক্ত কনিকা শ্বেত রক্ত কনিকার তুলনায় প্রায় ৫০০ গুন বেশী থাকে। (সুত্র Ganong, P522,23rdedition) ।এর কারন হিসাবে মূলত বলা হয় RBC এর লাইফ স্প্যান বেশী এবং WBC এর কম।এই ঘটনার সাথে তুলনা করা যেতে পারে সেনা বাহিনীর, তারা যেমন বাইরে কম ব্যারাকে বেশী থাকে ঠিক তেমনি দেহের সেনাবাহিনী হল শ্বেত রক্ত কনিকা।

আর একটা কথা না বললেই না, সকল ধরনের রক্তকনিকার মাদার সেলের নাম
Hematopoietic Stem Cell (HSCs)। আমরা বলি না, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, এইটা বলতে বোঝায় কিছু HSCs নিয়ে রোগীর শরীরের অস্থিতে প্রবেশ করানো তার আগে অবশ্য আগের বোন ম্যারো নস্ট করে নেওয়া হয়। প্রসেসটা অনেকটা দই তৈরির মত, দই করতে যেমন আগের দই এর অল্প একটু পানি লাগে ঐ রকম। আর এক টা মজার জিনিস আমরা পরবর্তীতে যখন রক্ত কনিকা তৈরি আলোচনা করবো তার পর আমাদের মাথায় শুধু থাকে যে HSCs শুধু মাত্র রক্ত কনিকা তৈরি করে কিন্তু ব্যপারটা আসলে টা নয়। এটি থেকে প্রায় অসংখ্য সেল  তৈরি হয় যেমন Osteoclasts, Kupffer cells, Mast cell,Langerhans cell ইত্যাদি।



রক্তকনিকা সৃষ্টির ধাপ দিয়ে এর পরের দিনের আলোচনা শুরু করবো।আজ আর একটা কথা বলে শেষ করি, অধিকাংশ সময় রক্ত কোথায় উৎপন্ন হয় বলতে পারলেও কিভাবে ধ্বংস হয় জীবনসীমা শেষে এইটা বলতে পারি না। মনে রেখ এটি করে Tissue Macrophages.

আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। কার খারাপ লাগল কার ভালো লাগলো জানালে খুশি হবো।

মন্তব্যগুলো সরাসরি লেখকের ফেসবুকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিতে পারেন, যদি এখানে মন্তব্য করতে অসুবিধা হয়।
লেখাটি PDF আকারে নামিয়ে নিতে ক্লিক করুন

লেখকঃশুভাশীষ সাহা শুভ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
আমার ফেসবুক ঠিকানা
৮ মার্চ, ১০১৩, রাজশাহী

0 comments: