বাসায় বানানো গবেষণাগারে ডিএনএ সংগ্রহ

0

প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
Ø  লবন
Ø যে কোন ধরণের ডিটারজেন্ট
Ø  ঠাণ্ডা পানি
Ø গ্লাস অথবা ছোট পাত্র
Ø চা ছাঁকনি
Ø চামচ
Ø টেস্ট টিউব
Ø কাঠি (নাড়ানোর জন্য)
Ø অ্যালকোহল (রাবিং অ্যালকোহল নামে কিনতে পাওয়া যায়)
Ø একটু আনারসের রস (এক দু ফোঁটা অথবা না পেলেও হবে)
Ø স্ট্রবেরি (তিন বা চারটি) বা সবুজ মটর ডাল বা যে কোন সবুজ শাক (তবে স্ট্রবেরি নিলে ভালো হয় কারণ এর একটি কোষে ৮ সেট করে জিনোম থাকে সাধারণত অন্যান্য কোষে থাকে ১ সেট।) যত বেশি পরিমান বস্তু নিয়ে শুরু করবে তত বেশি পরিমাণ ডিএনএ শেষে পাবে।

প্রস্তুতিঃ
প্রথমে অ্যালকোহল ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে। আরেকটি পাত্রে হাফ টেবিল চামচ লবণ, তিনভাগের এক কাপ ঠাণ্ডা পানি এবং এক চামচ ডিটারজেন্ট নিয়ে একসাথে মেশাতে হবে।এটা হল আমাদের লাইসিস দ্রবণ।

প্রক্রিয়াঃ
যদি তুমি স্ট্রবেরি নিয়ে থাকো তবে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভিতরে বোঁটা ফেলে দিয়ে স্ট্রবেরিগুলো ব্যাগে ভরে স্ট্রবেরিগুলোকে চাপদিয়ে ভালো করে থেঁতলে ফেলো আর যদি তুমি সবুজ মটর ডাল দিয়ে পরীক্ষাটি করতে চাও তবে হাফ কাপ ডাল নিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে দিয়ে অল্প পানি দিয়ে সবচেয়ে জোরে ১৫-২০ সেকেন্ড ঘুড়িয়ে থেঁতলে ফেল। এরপর ব্যাগের মধ্যে বা ব্লেন্ডার মেশিনে লাইসিস দ্রবণ দিয়ে দিয়ে আবার মিশ্রণ তৈরি করো। এতে একটি সুপের ন্যায় ঘন দ্রবণ তৈরি হবে। এই সুপের দ্রবণটাকে চা ছাঁকনি দিয়ে বেশ কয়েকবার ছেঁকে শাঁসগুলোকে আলাদা করে বাদ দিয়ে দাও।ছাঁকনি হিসাবে ফিল্টার পেপার ব্যবহার করতে পারলে ভালো হবে। এই দ্রবণে দুই তিন ফোঁটা Meat Tenderizer  বা আনারসের রস ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়, না পেলে সমস্যা নেই।এখন এই দ্রবণটি একটি টেস্ট টিউবে নিয়ে একটু বাঁকা করে ধরে তার মধ্যে ঠাণ্ডা করা অ্যালকোহল আস্তে আস্তে ঢেলে দাও যেন টেস্ট টিউবের মধ্যে সুপের পানি উপরে অ্যালকোহলের এক ইঞ্চি পুরু স্তর পড়ে। একটু টেস্ট টিউবটা ধরে হালকা নাড়া দিলে এই দুই স্তর এর মাঝে ধীরে ধীরে সাদা সাদা ডিএনএ দেখা যাবে, একে ছোট আইসক্রিমের কাঠি দিয়ে সতর্কতার সাথে উঠিয়ে নিয়ে আসলেই হয়ে গেল ডিএনএ বের করে আনার প্রক্রিয়া।


এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বেশি যে সকল সমস্যা দেখা যায়ঃ
১) আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না
ভালো করে লক্ষ্য করো, সম্ভবত ডিএনএ সুপের পানি এবং অ্যালকোহলের স্তরের মাঝে আটকে আছে। একটি কাঠি দিয়ে সুপের পানি থেকে কিছু পানি অ্যালকোহলের স্তরে নিয়ে এসো।
২) অল্প ডিএনএ নিয়ে শুরু করা
অল্প কোষ মানে অল্প ডিএনএ। এই পদ্ধতিতে দ্রবণে থাকা ডিএনএ এর তুলনায় দেখতে পাওয়া ডিএনএ এর পরিমাণ অনেক কম, তাই আরও বেশি কোষ নিয়ে আবার শুরু করো, আশা হারিয়ো না। বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে কি একবারেই সফলতা পাওয়া যায়?
৩) বেশি তাড়াহুড়া করা
অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই আনন্দের আতিশয্যে খুব দ্রুত কাজ শেষ করতে চায়, কিন্তু তাড়াহুড়া করলে তো হবে না। প্রতিটি ধাপে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিতে হবে। লাইসিস দ্রবণ মেশানোর পর কমপক্ষে ৫ মিনিট সময় দিতে হবে পরবর্তী কাজের আগে। খুব ঠাণ্ডা অ্যালকোহল ব্যবহার করতে হবে, এতে ডিএনএ এর দেখা পাবার সম্ভাবনা বাড়ে।

এই প্রক্রিয়ার পিছনের তত্ত্বঃ
অ্যালকোহলঃ
এটি ব্যবহার করা হয় কারণ অ্যালকোহল দ্রবণে ডিএনএ অদ্রবণীয়।ফলে ডিএনএ বের হলে তা দেখা যাবে।
লবনঃ
এটি অ্যালকোহল যোগ করার পর ডিএনএ জমা হতে সাহায্য করে।


বি দ্রঃ এই লেখাটি এখনো মনের মত করে শেষ করতে পারি নি।আরও কিছু বিষয় যোগ করার ইচ্ছা আছে।আগ্রহী কেউ যদি পরীক্ষণটি করে মতামত প্রদান করেন তবে খুব কৃতজ্ঞ হবো। এ ধরণের আরও কিছু লেখা পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে "ছোটদের জীনতত্ত্ব ও বায়োইনফরমেটিক্স" শিরোনামে একটি বই লেখার ইচ্ছা আছে। কেউ চাইলে এধরণের বইয়ে কি কি বিষয় থাকা উচিত বা কিভাবে এই লেখাকে উন্নত করা যায় এই বিষয়ে পরামর্শও দিতে পারেন।


শুভাশীষ সাহা শুভ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

0 comments: