এপিজেনেটিক্স

0

ডিএনএ, একটি রাসায়নিক যৌগ। ডিএনএ নামক এই রাসায়নিক যৌগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে। ইতিমধ্যে উন্নত মানের সিকুয়েন্সিং সিস্টেম দ্বারা আমরা সহজেই একজন মানুষের সম্পূর্ণ জিনোম ( ৪৬ টি ক্রোমোসোমের ডিএনএ) সিকুয়েন্স করে ফেলতে পারি, যদিও তা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একজন মানুষের সম্পূর্ণ জিনোমের ডিএনএ সিকুয়েন্স জানলেই কি আমরা বলে দিতে পারবো তার শরীরে কোন কোন জিন প্রোটিন তৈরি করছে?

উত্তর হচ্ছে না। সহজ ভাবে চিন্তা করলেই এই না এর পিছনের কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আমাদের দেহের সকল কোষে প্রায় একই ডিএনএ সিকুয়েন্সের জিনোম আছে কিন্তু আমাদের সকল কোষ কিন্তু একই রকম প্রোটিন তৈরি করে না। রক্ত কোষে হিমোগ্লোবিন থাকে, রেটিনার কোষে রোডপসিন। কিন্তু কেন এমন হয়?

আমাদের বর্ণমালাতে অনেকগুলো বর্ণ আছে। তাদের পাশাপাশি অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরির জন্য সাজিয়ে দিলেও কিন্তু বাক্য তৈরি হবে না। দরকার হয় বিরাম চিহ্নের।



এতক্ষণে পরিচয় করানো দরকার এপিজেনেটিক্সের সাথে। এপিজেনেটিক্স মূলত জিন কে ‘Switch on’ বা off করে। ডিএনএ এর সিকুয়েন্সে পরিবর্তন ব্যাতিত ডিএনএ তে যে পরিবর্তন হয় তাদের একত্রে এপিজেনেটিক্যাল অল্টারেশন বলে। এপিজেনেটিক্স হল আমাদের জিনতত্ত্বের বিরাম চিহ্নের মত। নাহ, বিরাম চিহ্ন বলে ঠিক শান্তি হচ্ছে না। ধরা যাক এক নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য ৫ জন অভিনেতার সবার কাছেই সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট আছে। কিন্তু যার যত টুকু অংশ ততটুকু বাদে বাকি অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই ঢেকে দেবার প্রক্রিয়া হল এপিজেনেটিক্স।এই এপিজেনেটিক্সের জন্যই মনোজাইগোটিক টুইনের মধ্যেও পার্থক্য সৃষ্টি হয়।

এপিজেনেটিক্স নির্ধারণ করে ডিএনএ এর কোন জিন কাজ করবে আর কোনটি করবে না। প্রজন্মান্তরে এপিজেনেটিক মডুলেশনের পদ্ধতিগুলো হল মূলত Methylation of DNA, Modification of histones, Binding of transcription factors to chromatin, and The timing of DNA replication. এর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি তথ্য আছে Methylation of DNA সম্পর্কে, এছাড়াও histone modification সম্পর্কে খুব সাম্প্রতিককালে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে এবং আসছে।

“এপিজেনেটিক প্রোগ্রামিং” টার্মটি প্রথম ১৯৯১ সালে ব্যবহার করেন লুকাস। এপিজেনেটিক প্রোগ্রামিং আমাদের ডেভলপমেন্টের সবচেয়ে সেনসেটিভ সময় যেমন ফিটাল ডেভলপমেন্ট ও জার্ম সেল প্রোডাকশনের সময় হয়ে থাকে।

The Developmental Origins of Health and Disease (DOHaD) হাইপোথিসিস periconceptual, fetal, and early infant phases of life এর সাথে ওবেসিটি ও মেটাবলিক সিনড্রোমের সম্পর্ক দেখিয়েছে। ইন্ট্রাইউটেরাইন লাইফে ফিটাস অ্যাডভার্স কন্ডিশনে এর গ্রোথ ও মেটাবলিজম ঠিক রাখতে গিয়ে যে পরিবর্তন আনে তা হয়ত তাকে তখন সাহায্য করে কিন্তু এই পরিবর্তন নানা ক্রনিক ডিসিসেজের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ফিটাল ম্যালনিউট্রিশনের সাথে সম্পর্কিত আরও নানা সমস্যা যেমন ফলেট ডিফিসিয়েন্সির নিউরাল টিউবের এর উপর ইফেক্ট পরীক্ষা করা যতটা সোজা ফিটাল প্রোগ্রামিং এর ইফেক্ট এর উপর ইনভেস্টিগেশন করাটা মানুষের ক্ষেত্রে খুব সোজা নয়, কারণ হল মূলত ফিটাল ড্যামেজ ও এর দৃশ্যমান ফলাফল হাতে পাবার মাঝের বিশাল সময়ের গ্যাপ।

নিউট্রিশন ডিফিসিয়েন্সি ও ফিটাল ইফেক্টের মধ্যে সম্পর্ক দেখানোর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ডাচ ফ্যামিন (১৯৪৪-১৯৪৫) কোহোর্ট স্টাডি। এতে দেখা যায় যারা এই দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়ে গর্ভে ছিল তাদের imprinted IGF2 gene এ তাদের সেম-সেক্স সিবলিং দের তুলনায় কম ডিএনএ মিথাইলেশন রয়েছে।

এছাড়াও আরও গবেশনায় দেখা গেছে গর্ভকালীন সময়ে increased maternal vitamin B12 সরাসরি নবজাতকের decreased global DNA methylation সাথে সম্পর্কিত। Conception এর সময়কালীন আন্ডার নিউট্রিশন নবজাতকের miRNAএর এক্সপ্রেশনে পরিবর্তন আনে যা পরবর্তীতে insulin resistance সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।



সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে আমাদের অনেকের ক্ষিদে বেশি লাগে কিংবা উচ্চ মসলাযুক্ত খাবার ভালো লাগে তার পিছনেও আছে এই এপিজেনেটিক মডিফিকেশনের ভূমিকা।





0 comments: