মস্তিষ্ক ও নারী পুরুষের পার্থক্য

0


সম্প্রতি University of Exeter এবং King's College London এর গবেষণা মানব মস্তিকের বিকাশের জটিল প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা যা জানি তাতে নতুন মাত্রা দিয়েছে।



Genome Research নামে জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে তারা মানবমস্তিস্ক গঠনের সাথে যুক্ত জিনের সক্রিয়তা নিয়ে কাজ করেন। তাদের গবেষণার একটি অংশ ছিল মানব মস্তিস্কের কোষে ডিএনএ মিথাইলেশন নামে একটি প্রক্রিয়ার পার্থক্য নিয়ে যা পুরুষ ও নারীর আচরণ, মস্তিস্কের কার্যনীতি ও রোগের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে ডিএনএ মিথাইলেশন হল ডিএনএ অণুর গঠনগত পরিবর্তন না করে ডিএনএ অণুর সাথে মিথাইল মূলক যুক্ত করার মাধ্যমে ডিএনএ এর সংশ্লিষ্ট অংশকে নিস্ক্রিয় করে দেয়া অর্থাৎ প্রোটিন তৈরি করতে না দেয়া। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল সেই সকল আণবিক ‘সুইচ’ নিয়ে কাজ করা যা ডিএনএ এর গঠন না বদলেই তাকে নিস্ক্রিয় করে দিতে পারে। এককথায় এই প্রক্রিয়া গুলোকে একত্রে এপিজেনেটিক্স বলে(এপি শব্দের অর্থ উপরে)।

ডিএনএ মিথাইলেশন এই এপিজেনেটিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে আমাদের সবচেয়ে বেশি জানা আছে এমন প্রক্রিয়া হলেও আরও কিছু প্রক্রিয়া যেমন হিস্টোন প্রোটিনের চার্জগত পরিবর্তন, নিউক্লিওসোমের অবস্থানগত পরিবর্তন ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। মজার বিষয় হল আমাদের শরীরের সকল কোষে একই ডিএনএ থাকলেও সকল কোষ একই প্রোটিন তৈরি করতে পারে না মূলত বিভিন্ন কোষে থাকা একই ডিএনএের এপিজেনেটিক মার্ক বা চিহ্নগুলো ভিন্ন হয় বলে। আরও জানার বিষয় হল জনন কোষ গঠনের সময় বাবা-মায়ের কোষের এপিজেনেটিক মার্কগুলোর কিছু অংশ মুছে যায় বলে যে কোন কোষে পরিবর্তন হতে পারে এমন স্টেম কোষ সৃষ্টি হয় এবং একটি মাত্র কোষ থেকে সম্পূর্ণ নতুন দেহের সকল কোষ সৃষ্টি হয়। সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে যে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বিকাশের সময় প্রতিনিয়ত তার কোষগুলোতে নতুন এপিজেনেটিক মার্ক যুক্ত হতে থাকে এবং এভাবেই সম্পূর্ণ নতুন এপিজেনেটিক প্রোগ্রামিং হয়।
University of Exeter Medical School এবং King's College London এর প্রফেসর জনাথন মিল, যার নেতৃতে এই গবেষণা করা হয়, বলেন “ গর্ভকালীন সময় এমন এক সময় যখন মানব মস্তিস্ক আকার ধারণ করতে শুরু করে এবং এর নিজস্ব গঠনগুলোকে তৈরি করতে থাকে যা সারাজীবন মস্তিস্কের কাজ কে নিয়ত্রন করবে। এই জটিল গঠন প্রক্রিয়াতে কোন জিনগুলো সক্রিয় হয়ে ভূমিকা রাখে তা আমাদের অটিজম বা সিজোফ্রেনিয়ার মত রোগগুলোর উৎস ও কারণ সম্পর্কে আরও ভালো ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে কারণ এ ধরনের রোগের সাথে স্নায়ুর বিকাশজনিত ঘটনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে”।


অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা নিষেকের ২৩ দিন থেকে শুরু করে ১৮৪ দিন বয়সী ১৭৯টি ভ্রূণ থেকে সংগৃহীত নমুনার সম্পূর্ণ জিনোমে ডিএনএ মিথাইলেশনের পরিমাণ নির্ণয় করেন। সম্পূর্ণ জিনোমের পরীক্ষাধীন ৪০০০০ স্থানের মধ্যে ৭% স্থানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডিএনএ মিথাইলেশনের পরিবর্তন পাওয়া গিয়েছে।

এই গবেষণার প্রথম লেখিকা King's College London এর Helen Spiers মন্তব্য করেন “নারী ও পুরুষ কিছু স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ভিন্নতা প্রদর্শন করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, প্রতি পাঁচজন পুরুষে এক জন নারী অটিজমে আক্রান্ত হন। তাই মস্তিস্ক গঠনে লিঙ্গ ভিন্নতার যে প্রভাব তা আমাদের এই রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে ভিন্নতা তা বুঝতে সাহায্য করবে”।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের তুলনায় পুরুষের মস্তিস্কের মোট আয়তন বেশি থাকে তবে মস্তিস্কের আয়তনের সাথে মেধার কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই। এছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় করা গবেষণাতে দেখা গেছে পুরুষের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকবার চেষ্টাজনিত সহজাত প্রবৃতি, মেধা ও নতুন কিছু শেখা নিয়ত্রনকারী অংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ভাষা ও আবেগ নিয়ত্রনকারী অংশের আয়তন বেশি হয়ে থাকে। জেনে রাখার মত বিষয় হল শুধু মাত্র ভ্রুনাবস্থাতেই নয় জন্মের পরও মস্তিস্কের বিকাশজনিত পার্থক্য বাড়তেই থাকে। ২০০৭ সালে নিউরোইমেজ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা দেখিয়েছিলেন যে ২২ বছর বয়সে একজন নারীর মস্তিস্ক পূর্ণভাবে বিকশিত হয় যেখানে একজন পুরুষের সময় লাগে প্রায় ৩০ বছর। এছাড়াও কিশোর বয়সে নারী ও পুরুষের আচরণ ভিন্নতার সাথেও মস্তিস্কের বিকাশ জনিত পার্থক্যের সম্পর্ক রয়েছে।

- শুভাশীষ সাহা শুভ
তথ্যসুত্রঃ

১। http://www.nhs.uk/news/2014/02February/Pages/Mens-and-womens-brains-found-to-be-different-sizes.aspx

২। http://www.boysadrift.com/2007Giedd.pdf

৩। http://www.sciencedaily.com/releases/2015/02/150203190223.htm

0 comments: