বিষয়ঃ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল

0
যে মুহূর্তে এ লেখা লিখছি তখন এদেশের এক বিশাল জনসংখ্যা বিশাল মানসিক চাপে আছে। আগামী কাল রেজাল্ট বের হবে। অনেক সাধনার পর তারা মাধ্যমিক পর্যায় পাশ করবে। এই একই ফলাফলের উপর নির্ভর করে তারা ভর্তি হবে পছন্দের কলেজে।
পরীক্ষা তো অনেক রকম হয়, অ্যাকাডেমিক, শারীরিক, মানসিক। মাধ্যমিক পর্যায়ের এ পরীক্ষা অনেকটা এ সবেরই মিশ্রণ। জীবনে কী এই ছোট বাচ্চারা কম পরীক্ষা দিয়েছে? সেই ক্লাস ওয়ান থেকে পরীক্ষা দিয়েই আসছে। এটি তাদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষাও নয়। তবে কেন এত ভয়? ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক সবার টেনশন শুধু মাত্র ভালো রেজাল্টের। দু বছরে কী শেখা বা জানা হল তা এখানে প্রায় তুচ্ছ হয়ে যায়। কেন এমন হয়, কেন এই রেজাল্টের একটি লেটার গ্রেড বা জিপিএ এর একখানি মানের জন্য এত দুশ্চিন্তা?
মূল বিষয়টি সম্ভবত স্বপ্ন ভঙ্গের। কেউ হয়ত আশা করে আছে সব বিষয়ে এ প্লাস পেলে নটর ডেম বা ভিকারুননেসা কলেজে পড়বে। কেউ হয়ত আশায় আছে বাবা ধান বিক্রি করা টাকায় পড়ালেখা করিয়েছে আমার নিজের জন্য না হোক বাবার জন্য ভালো ফলাফল পেতে হবে। ফলাফল নিয়ে সব চেয়ে বেশি চিন্তায় আছে সম্ভবত দুটি গ্রুপ। প্রথম গ্রুপ যারা সকল বিষয়ে এ প্লাসের প্রত্যাশা করে আছে এবং দ্বিতীয় গ্রুপ যারা নিছক পাশ করার আশা নিয়ে আছে। এ মুহূর্তে সবার জীবন মরণ আঁটকে আছে ঐ রেজাল্টের মাঝে।

তোমরা চিন্তা করো না। কারণ এ দুবছরে তোমার যে অর্জন তা কোনদিন তোমার থেকে কেউ নিতে পারবে না। হয়ত বলবে সার্টিফিকেট ছাড়া তো কেউ দাম দেবে না। না দিলো। তুমি যখন কষ্ট করছিলে তখন কি তারা এসেছিল তোমার খোঁজ নিতে?তোমায় সাহায্য করতে? না তোমার পাশে ছিল তোমার বাবা মা। রেজাল্ট খারাপ হলে হয়ত তোমার মা একটু বকা দেবে বাবা হয়ত মন খারাপ করে কথা বলবে না কিন্তু তারা কিন্তু তোমায় দূরে সরিয়ে দেবে না কখনো। কেন তারা এমন করবেন জানো? কারণ তারা তোমায় অনেক বেশি ভালবাসেন, তারা জানেন এর চেয়ে আরও অনেক ভালো হয়ত তুমি করতে পারতে। তারা হয়ত আশাও করেছিলেন। তুমি যখন খারাপ করলে তখন তোমার পরিশ্রমের পাশাপাশি তাদের পরিশ্রমটাও একটু কম মূল্যায়ন পেল। কিন্তু এতে তো তোমার কোন দোষ নেই কারণ তুমি তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছ।
তোমার বাবা মা এর কাছে তোমার আদর কখনোই কমবে না। এখন বলবে “ফলাফল খারাপ হলে যে সব স্বপ্নের জগত একসাথে নষ্ট হয়ে যাবে তখন কী করবো?”
পরীক্ষা দিয়েছ সেটা তোমার কাজ ছিল ফলাফল প্রদান করাটা তোমার হাতে নেই, তোমার দায়িত্বও নয়। তুমি শুধু এখন আশা কর কাল ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে। কারণ পরিসংখ্যান বলে তোমরা তোমাদের বিদ্যালয়ে যে ধরনের ফলাফল করেছ সাধারণত মূল রেজাল্ট তারচেয়ে ভালো হয়। যাদের ফলাফল আগামীকাল মনের মত হবে তাদের জন্য আমার শুভকামনা এবং তাদের জন্য আমার এ লেখা এখানেই শেষ।
এর পর যা কিছু লেখা আছে তা এখন পড়ো না।
পরবর্তী লেখা শুধু মাত্র তাদের জন্য যাদের কাল মন খারাপ হবে। মন খারাপ হলে এসে তখন পড়ো।










প্রথমেই বলে নেয় এসএসসিতে আমি যখন খারাপ করলাম তখন আমাকে কী কী সহ্য করতে হয়েছিল। আমি অনেক বেশি ভিতু ছিলাম, অনেক বেশি টেনশন করতাম।আজ পর্যন্ত কোন পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে যাবার সাহস হয় নি। শুনলাম এ প্লাস, কিন্তু বাংলা ও সমাজে এ এসেছে। রেজাল্টের দিন কেউ কেউ খোঁটা দিয়ে বলেছিল “মোল্লার দোড় মসজিদ পর্যন্তই”। রেজাল্টের জন্য পছন্দের কলেজে পড়তে পারি নি, ভর্তি হতে হয়েছিল এমন এক কলেজে যেখানে পড়ার বিষয়ে বুদ্ধি বয়স থেকে খারাপ ধারণা ছিল। কিন্তু সবশেষে আজ কী মনে হয় জানো “বেশ তো আছি, ভালোই”
জানি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে এ মুহূর্তে তোমার অনেক মন খারাপ। অসংখ্য স্বপ্ন তোমার হয়ত ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু মনে রাখো যতক্ষণ তুমি মন খারাপ করে বসে থাকবে ততক্ষণ তুমি আসলে পিছিয়ে পড়বে। হাঁটতে গিয়ে অনেক বারই মানুষ পড়ে যায়, বুদ্ধিমানের কাজ তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ানো। ভাবো মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখনকার কথা। পাকিস্তান বাহিনী আমাদের উপর যখন প্রথম আক্রমণ করে তখন আমাদের প্রতিরোধ কতটুকু ছিল? তখন যদি সবাই বসে কান্নাকাটি করত তখন কী হত? তোমাকেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
স্বপ্নগুলো তো তুমিই দেখেছিলে তাই না? আবার দেখবে। তবে একটু ভিন্নভাবে। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তোমার সামনের দিন সাজানোর কাজ করতে হবে। আবার বলছি তোমার যা কিছু অর্জন তা তোমারই আছে শুধুমাত্র কয়েকটা কাগজ বদলে গেছে। তুমি হয়ত পছন্দের কলেজে পড়তে পারবে না, ঠিক আছে, অন্য কোথাও পড়বে। পড়তে তো পারবে। যদি মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় তবে নিজেকে গুটিয়ে নেবে। আগেও বলেছি তোমার প্রকৃত ভালো বন্ধু, তোমার বাবা মা কখনো তোমায় দূরে সরিয়ে দেবে না। তাদের ভালোবাসাকে কাজে লাগাবে। রেজাল্টকে শুধুমাত্র একটা কাগজ হিসাবে ভাববে। তোমার স্বপ্নগুলো আবার সাজাবে। হয়ত তুমি ভেবেছিলে ভালো রেজাল্ট হলে ল্যাপটপ বা সাইকেল কিনবে, এখন কিনতে পারছো না তো ঠিক আছে কিনবে না। এত দিন তোমার জীবন সাইকেল ছাড়া আনন্দে চললে এখন চলবে না? হয়ত তুমি ভেবেছ তুমি ভবিষ্যতে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে সে স্বপ্নের কী হবে? কিছুই হবে না অল্প একটু পরিবর্তন করতে হবে। আগে হয়ত তোমায় ভর্তি পরীক্ষায় ৫০ পেতে হত এখন ৫৫ পেতে হবে। যদি মনে কর যে না ৫৫ পাওয়া অনেক কষ্টকর, তাহলে বলবো পৃথিবীতে সবাই কে কী ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে? আরও অসংখ্য ভালো পেশা আছে। ভাবতে থাকো অন্য কিছু ভালো লেগেই যাবে।

এককথাতে বললে তোমার স্বপ্ন পরিবেশ পরিস্থিতি একবার নয় বারবার ভেঙ্গে দেবে, দেবেই। তোমার টিকে থাকা নির্ভর করে তুমি কত দ্রুত আবার স্বপ্ন দেখতে পারো তার উপর। পড়ে যাওয়া মানেই দৌড়ে হেরে যাওয়া নয়, চেষ্টা না করাটা হয়ত হেরে যাওয়া। নিজেকে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবতার সাপেক্ষে তুলনা করো, পরিবর্তন করো, পরিবর্ধন করো, এগিয়ে যাও।

এই কামনায়,

0 comments: